নির্মাণের আধুনিকতার সাথে বাড়ছে স্টিলের সেকশনাল আইটেমের চাহিদা

steel section item

নির্মাণ শিল্পের পরিবর্তন

স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের নির্মাণ শিল্পের জন্য সবচেয়ে বড় পরিবর্তনের সময়টা আসে ৯০ এর দশকে।এই সময়ে বাংলাদেশ ব্রিক ফাউন্ডেশন স্ট্রাকচার থেকে ফ্রেম স্ট্রাকচার অর্থাৎ বিম-কলামের স্থাপনার একটা বিপ্লব দেখতে পায়। এরপরে নির্মাণ কাজের আরও একটি আমূল পরিবর্তনের দেখা মেলে বর্তমান সরকারের শুরুর সময়, অর্থাৎ ২০০৮-০৯ এর দিক থেকে স্টিল স্ট্রাকচার এর জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।

বাজারের বর্তমান চাহিদা

বর্তমানে বাংলাদেশে বছরে ৬৩ থেকে ৬৬ লক্ষ মেট্রিক টন রডের অর্থাৎ রিবারের চাহিদার পাশাপাশি, প্রায় ৮ লক্ষ ১০ হাজার থেকে ৮ লক্ষ ৬০ হাজার মেট্রিক টন স্টিলের সেকশনাল আইটেমের চাহিদা আছে। এবং এটি ধীরে ধীরে বাড়ছে। আমি যদি একদম সুনির্ধারিত ভাবে বলি তাহলে বাজার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, গত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে স্টিলের সেকশনাল আইটেমের চাহিদা ছিল ৮ লক্ষ ১০ হাজার মেট্রিক টন, যা এই অর্থ বছরে ৬% বেড়ে ৮ লক্ষ ৬০ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হবে বলে ধারণা করা যায়।

চাহিদার উৎস

যমুনা রেইল লিংক ব্রিজ , মেট্রো রেলের লাইন ওয়ান-লাইন ফাইভ, কেওয়াটখালি আর্ক্ ব্রিজ প্রজেক্ট এর মতো জাতীয় নির্মাণ ও বিদ্যুৎ খাতে টাওয়ার স্থাপনের কাজ, এই বাড়তি চাহিদার উৎস হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।  তাছাড়া , নির্মাণের সময় কমে যাওয়া , পুনরায় বিক্রয়যোগ্যতার কারণে, ইন্ডাস্ট্রিয়াল বা শিল্প কারখানা গুলো নির্মাণেও এখন দিন দিন এই পণ্যগুলোর প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে।

অধিকতর ব্যবহার হচ্ছে

বাংলাদেশে স্টিলের যেসব সেকশনাল আইটেমস অধিকতর ব্যবহার হচ্ছে তার মধ্যে, বিভিন্ন সাইজের এঙ্গেল , স্কোয়ার বার , চ্যানেল , এইচ-বিম , রাউন্ড টিউব , স্কোয়ার টিউব , এস এস বাক্স পাইপ , এম এস বক্স পাইপ ও রিবড ওয়ার প্রধান।  এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা এঙ্গেল ও স্কোয়ার বার এর।

যেসব প্রতিষ্ঠান বাজারে এই ধরণের সেকশনাল আইটেম গুলো সরবরাহ করে আসছে

বিভিন্ন স্টিল ম্যানুফ্যাকচারিং প্রতিষ্ঠান বাজারে এই ধরণের সেকশনাল আইটেম গুলো সরবরাহ করে আসছে, যার মধ্যে বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিল , বিক্রমপুর স্টিল , রহিম স্টিল , রহিমা গ্রূপের এইচআরআরএম , বন্দর স্টিল , শফিউল আলম স্টিল , গ্রাম বাংলা টিউবস , সাউথ কোরিয়া বাংলাদেশ স্টেইনলেস স্টিল , সীমা স্টিল এগুলো উল্লেখযোগ্য এবং এরাই বাজারের প্রায় ৭০ ভাগ যোগান দিয়ে যাচ্ছে।

বিক্রয়ের পরিমানের দিক থেকে শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে যারা

এর মধ্যে বিএসআরএম রডের মত এখানেও বাজারের প্রায় এক-সপ্তমাংশ  শেয়ার নিয়ে বিক্রয়ের পরিমানের দিক থেকে শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে । পাশাপাশি বিক্রমপুর স্টিল ও রহিম স্টিল যথাক্রমে প্রতিযোগিতা করে যথাক্রমে প্রায় শতকরা ১১ ভাগ ও ১০ ভাগ বাজার দখল করে আছে। পরিচিত অন্য ব্র্যান্ড গুলোর মধ্যে রহিমা গ্রূপের এইচআরআরএম ও বন্দর স্টিল বাদে সবারই বাজারে অবস্থান শতকরা ৫ ভাগের নিচে। একদম অপরিচিত কিংবা নব্য উৎপাদনকারীদের অবস্থান কিন্তু বাজারে একেবারেই কম না। প্রায় ৩০ ভাগ বাজার তারাই নিয়ন্ত্রণ করছে।

স্ট্যান্ডার্ড / মানদন্ড

বাজারের অপরিচিত ব্র্যান্ড গুলো কোনো স্ট্যান্ডার্ড এর তোয়াক্কা না করলেও, পরিচিত ব্র্যান্ড গুলো ঠিকই এই পণ্যগুলো উৎপাদনে মানছেন ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড অর্গাইনাইজেশন, আমেরিকান সোসাইটি ফর টেস্টিং এন্ড ম্যাটেরিয়ালস এর বেঁধে দেয়া সব মানদন্ড।

বাজারমূল্য

এইসব লৌহজাত পণ্যের বাজারমূল্য কিন্তু একেবারেই কম না। এই অর্থবছরে যদি ধারণকৃত ৮ লক্ষ ৬০ হাজার মেট্রিক টন সেকশনাল আইটেম বাজারজাত করা হয় তবে তার মূল্য প্রায় ৭ হাজার ৭ শ ৪০ কোটি টাকা। যা কিনা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সেকশনাল আইটেম প্রস্তুতকারী দেশ সমূহ

বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি স্টিলের সেকশনাল আইটেম প্রস্তুতকারী দেশ হচ্ছে চায়না, তার পরপরই আছে আমাদের প্রতিবেশী ভারতের নাম। এরপরে যথাক্রমে জাপান, আমেরিকা, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি, তুরস্ক, ব্রাজিল ও ইরানের নাম আসে। এরা প্রত্যেকেই বিশ্ব অর্থনীতিতে এক একটি পরাশক্তি। 

উন্নয়নের নিদর্শন

নির্মাণে সেকশনাল আইটেমের ব্যবহার বৃদ্ধি যে একটি দেশের টেকসই উন্নয়নের নিদর্শন যা কিনা দেশকে অর্থনৈতিক দিক থেকে করবে শক্তিশালী দেশগুলোর নামের ক্রম ধারা তারই প্রমাণ।

উৎপাদন প্রক্রিয়া

বাজারের সবগুলো প্রতিষ্ঠানই বর্তমানে পুরোনো পদ্ধতির ইন্ডাকশন ফার্নেস ব্যবহার করে এইসব পণ্য উৎপাদন করছে।

আশাবাদ

তবে আমার বিশ্বাস, আধুনিক প্রযুক্তির আর্ক্ ফার্নেস কিংবা বিশ্বের লৌহজাত পণ্য উৎপাদনের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির কোয়ান্টাম ইলেকট্রিক ফার্নেস সম্বলিত বাংলাদেশের ম্যানুফ্যাকচারিং প্রতিষ্ঠানগুলো এই সম্ভবনাময় ক্ষেত্রে প্রবেশ করলে, আগামী দিনে বাংলাদেশ পেতে পারবে আরও উন্নত ও মানসম্মত স্টিলের সেকশনাল আইটেম। যা কিনা দেশের টেকসই উন্নয়নের পাশাপাশি প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বাজারকে মুক্ত করতে পারবে অখ্যাত এবং মানহীন এই সব গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণ সামগ্রীর হাত থেকে।

প্রোকৌশলী মোঃ গোলাম হোসেন ফারহান, জিপিএইচ ইস্পাত লিঃ

Total
0
Shares
Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Prev
লাল মানেই মরিচা নয়,মরিচা মানেই রড খারাপ নয়!
farhansarticle.com

লাল মানেই মরিচা নয়,মরিচা মানেই রড খারাপ নয়!

বাংলাদেশে দিন দিন অবকাঠামোগত উন্নয়নের সাথে সাথে রডের চাহিদা এবং উৎপাদন দুটোই

Next
আইএবি বিল্ড এক্সপো ২০২৩- এ এশিয়ান পেইন্টসের বর্ণিল আয়োজন
asian paints

আইএবি বিল্ড এক্সপো ২০২৩- এ এশিয়ান পেইন্টসের বর্ণিল আয়োজন

দেশের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ নির্মাণ বিষয়ক প্রদর্শনী ‘আইএবি বিল্ড এক্সপো ২০২৩’-এ