সবুজে ঘেরা সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে কে না থাকতে চায়। কিন্তু নগরায়নের ফলে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ প্রকৃতি। সভ্যতার ক্রমবিকাশে নগর ধীরে ধীরে পরিপূর্ণ হচ্ছে কংক্রিটের ভবনে। যেহেতু মানুষ প্রকৃতির অপার সৃষ্টি, তাই সে বাঁচতে চায় প্রকৃতির মাঝেই। সেক্ষেত্রে নিজের বাসগৃহ, অফিস এমনকি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ছাদেই যদি সবুজ গাছপালার সমারোহ ঘটানো যায় তবে মন্দ হয় না। পরিবেশপ্রেমি স্থপতিরা স্থাপত্যে নান্দনিকতা দিতে সবুজায়নের দিকে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তারা ঘরের ছাদকে সাজিয়েছেন সবুজের রংয়ে যাকে বলা হয় গ্রিন রুফ বা সবুজ ছাদ।
গ্রিন রুফ কি?
গ্রিন রুফ বা সবুজ ছাদ অত্যন্ত পরিবেশবান্ধব একটি ছাদ ব্যবস্থা, যেখানে মাটি ভরাট করে সবুজ গাছপালা জন্মানো হয়। যা ব্যক্তিগত এবং বাণিজ্যিক ভবনের জন্য প্রতিরক্ষা হিসেবে কাজ করে। এছাড়া প্রচলিত ছাদের তুলনায় এটি দীর্ঘস্থায়ী, নান্দনিক, প্রাকৃতিক ও এর রয়েছে পরিবেশগত নানা সুবিধা। যেকোনো ভবনের ছাদকে বৃক্ষশোভিত করে সবুজ ছাদে পরিণত করা যায়। আমাদের দেশে এই ছাদ ব্যবস্থা বেশি না থাকলেও উন্নত বিশ্বে এটি বহুল ব্যবহৃত একটি ব্যবস্থা। গ্রিন রুফ আন্দোলন প্রায় ৫০ বছর আগে শুরু হয়েছিল জার্মানিতে এবং এরই মধ্যে এসেছে এর উল্লেখ করার মত সফলতা।
গ্রিন রুফ যে কারণে বাসগৃহ এবং পরিবেশের জন্য ভালো
ঝড়ের সময় পানি প্রবাহ কমায়: সাধারণত সবুজ ছাদে বাৎসরিক যে পরিমাণ পানি প্রবাহ হয় তার ৫০-৬০ ভাগ পানি ধরে রাখতে সক্ষম হয়। এর মাধ্যমে বৃষ্টির পানির ব্যবস্থাপনা খরচ কমে যায় এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ সহায়ক হয়।
তাপের প্রভাব কমিয়ে ফেলে: সাধারণত সবুজ ছাদ প্রচলিত ছাদের তুলনায় গ্রীষ্মকালে ২০-৬০ ডিগ্রি তাপমাত্রা কম থাকে।
বাতাসের কার্বন যৌগ এবং ধুলাবালি ধরে রাখতে সাহায্য করে: একটি গবেষণায় দেখা গেছে ১ বর্গমিটার ঘাসের ছাদ প্রতি বছর ০.২ কেজি কার্বন কণা দূর করতে পারে।
ভবনের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ: এটি ভবনের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে যার ফলে ভবন গ্রীষ্মকালে ঠান্ডা এবং শীতকালে গরম থাকে।
দূষণরোধ: সবুজ ছাদ শব্দ ও বায়ুদূষণ রোধ করে।
প্রাণীকূলের জন্য উপকারী: কীটপতঙ্গ ও পাখি গ্রিন রুফে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারে।
সবুজ ছাদের প্রাথমিক খরচ যেসব জিনিসের উপর নির্ভর করে
- কি ধরনের সিস্টেম স্থাপন করা হচ্ছে
- ছাদের ক্ষেত্রফল
- মাটির পুরুত্বের
- উদ্ভিদের ধরণ
- সেচ ব্যবস্থার ধরণ, প্রভৃতি
সবুজ ছাদ স্থাপনের আগে যেসব বিষয়ের উপর খেয়াল রাখা প্রয়োজন
ঢাল: সবুজ ছাদ বা গ্রিন রুফ এর ক্ষেত্রে ঢাল একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। ঢাল ৭:১২ (৩০ ডিগ্রি) হলে উপকরণসমূহের স্লিপেজ এবং স্লাপিং এর সমস্যা হয়। আবার সমতল ছাদে নিষ্কাষণ ব্যবস্থার সমস্যা হতে পারে। তাই আদর্শ ঢালের মান হলো ১:১২। কিছু ক্ষেত্রে ১/২: ১২ও হতে পারে।
আবহাওয়া: সূর্যালোক, বায়ুপ্রবাহ, ছায়া, তাপমাত্রা সর্বোপরি আবহাওয়া সবুজ ছাদ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাধারণত নাতিশীতোষ্ণ এবং গ্রীষ্মপ্রধান দেশগুলোতে এর ব্যবহার লক্ষণীয়।
এছাড়া ছাদ ব্যবহারের পূর্বে অভিজ্ঞ প্রকৌশলী সরাসরি তত্ত্বাবধানে করানো উচিত যে, ছাদটি গ্রীন রুফ ব্যবহার উপযোগী কি না।
যেভাবে তৈরী করবেন গ্রিন রুফ বা সবুজ ছাদ
সবুজ ছাদ বা গ্রিন রুফ বানানোর জন্য কিছু বিষয় অপরিহার্য, যেমন-
জল নিরোধী স্তর: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যয়বহুল স্তর এটি, যাতে কংক্রিটের ছাদ ভিজে না যায় এবং গাছের মূলের ভেদন যোগ্যতাকে বাধা দেয়।
নিষ্কাষণ স্তর: সেচের পানি নিষ্কাষণের জন্য একটি নিষ্কাষণ স্তর প্রয়োজন যা সাধারণত পুরু পাথরের স্তর (নুড়ি, ঝামাপাথর, লাভা, শিলা, বরফী- সহজেই পাতলা পাতে বিভক্ত হয় এমন শিলা) দ্বারা গঠন করা হয়। এছাড়া বহু রন্ধ্রযুক্ত ম্যাটস যেমন এনকা ড্রেন সহজেই জলপ্রণালীর পথ সৃষ্টি করে।
মাটির স্তর : মাটির স্তর বেশ হালকা হতে হবে এবং কিছু আদর্শ ধর্ম থাকতে হবে। যেমন-
- আর্দ্রতা ধরে রাখা
- অতিরিক্ত পানি নিষ্কাষণ ক্ষমতা
- পুষ্টি প্রদান ও সংরক্ষণ করা
- সাধারণত উদ্ভিদ হিসেবে বীরুৎ, গুল্ম এবং সৌন্দর্যবর্ধনকারী উদ্ভিদ জন্মানো যেতে পারে। কারণ এই উদ্ভিদগুলো কষ্ট সহিষ্ণু ,খরা সহনশীল , কাষ্ঠল্ববিহীন মূল এবং সামান্য রক্ষণাবেক্ষণে বেড়ে উঠে।
#green #greeroof #beyondspaces